Current News24

Latest Post
১৮জুলাই ৩৬ জুলাই Bangladesh Bangladesh Politics bangladeshi BangladeshPolitics bd BreakingNews CNP24 Current News Bangladesh EARNINGS Google Pay Hasnat Abdullah International mahathir mohamad National NCP NID NID CORRECTION Scholarship অতিরিক্ত ম্যানেজমেন্ট অধ্যাপক আবুল বারকাত অনলাইন আবেদন অন্তর্বর্তী সরকার অফিস অফিস জব অফিস পলিটিক্স অর্থনীতিবিদ আধুনিক গান আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন আবুল বারাকাত আযান কবিতা আর্টিকেল আল মাহমুদ ইউনুস ইউরোপ ইরান ইসরায়েল ইসলাম ইসলামী জীবন ইসলামী রাজনীতি উকিল নোটিশ উচ্চতা উচ্চশিক্ষা উপন্যাস এক টাকায় রোগী দেখেন এনআইডি এনআইডি সংশোধন এনআইডি হালনাগাদ এনসিপি এন্ড্রোকিশোর এমবিবিএস ঐক্যমত ওয়াকার-উজ-জামান কবি আল মাহমুদ করোনা করোনাভাইরাস কাঠ কাঠের হিসাব গল্প গাজা গাজাবাসী গান গুগল পে গোপালগঞ্জ ট্র্যাজেডি গোল কাঠের হিসাব গ্রামীণ ব্যাংকে ঘুম চাহিদা চেয়ারম্যান জনতা ব্যাংক চেরাই কাঠের মাপ চৈত্রিকা ছোট গল্প জব জাতীয় সংবাদ জিপে জীবনযাপন জুলাই আন্দোলন জুলাই বিপ্লব জেনারেলওয়াকার জ্ঞান টিউলিপ সিদ্দিক টেক নিউজ ড. ইউনুস ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ড. মুহাম্মদ ইউনুস ডক্টর ইউনূসকে টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি তথ্যপ্রযুক্তি তুষার তুষার কান্ড তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দক্ষতা দাম্পত্য জীবন দুর্নীতি দূতাবাস দ্য ইকোনমিস্ট ধর্ম জীবন ধর্মভিত্তিক দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ধারাবাহিক উপন্যাস ধৈর্য নতুন পলাশীর প্রান্তর নারী নারীর যৌনতা নিউরালিংক নিউরালিংক কি? নিউরালিংক কীভাবে কাজ করে নিষ্ঠাবান কর্মি নীল রক্ত নোটিশ নোবেল নোংরা রাজনীতি পরকীয়া পরমতসহিষ্ণুতা পরীক্ষার ভাইভা প্রস্তুতি পরোপকারী পারমাণবিক প্রধান উপদেষ্টা প্রযুক্তি প্রেম প্রেম ল ফিলিস্তিন বন্দী পাখি বাংলা গান বাংলাদেশ বাংলাদেশরাজনীতি বাংলাদেশে জিপে বিচার বিভাগ বিচ্ছেদ বিদেশ বিদ্যুৎ বিয়ে বিরহ বিশ্ব সংবাদ বিশ্বযুদ্ধ বিস্ময়কর প্রতিভা ব্যাক্তিত্ব ভাইভা ভাইরাল নিউজ ভারত নিউজ ভারতের প্রেসিডেন্ট ভালোবাসা মন বাড়িয়ে ছুঁই মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার কমিশন ঢাকা মানবিকতা মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ মীর মুগ্ধ মৃত্যু ও হিংস্রতা মেঘকন্যা ম্যানেজমেন্ট যৌন নির্যাতন রক্তাক্ত বাংলাদেশ রাজনীতি রাজনৈতিকসংকট রাজাকার রাতের ইবাদত রাতের ঘুম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লাইফ পার্টনার লাভ বোম্বিং শহীদ জিয়া শিক্ষা শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু সখের নারী সঙ্গীত সচিবালয় সন্তানকে অভাব চিনতে শিখান সময় মতো ঘুম সম্পর্ক সহিষ্ণুতা সাইলেন্ট ডিভোর্স সাংবাদিক সাংবাদিক ইউনিয়ন সাহিত্য সিম কার্ড সিমের রেজিস্ট্রেশন সিমের রেজিস্ট্রেশন বাতিল সীমিত চাহিদা সুন্দর জীবন সুস্থ জীবন সেনাবাহিনী সোনার খাঁচা স্ত্রী স্বামী স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ স্মার্টনেস হারানো সিম হিংস্র রাজনীতি হিংস্রতা

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিটি পাকড়াও করে নিজের দেশে নিয়ে এলেন। পাখির জন্য সোনার খাঁচা বানানো হলো। খাঁচায় ভিতরে স্বাধীনতার অভাব থাকলেও খাবারের কোনো অভাব ছিল না। সহজে অন্নসংস্থান হওয়াতে, কিংবা হয়তো বাধ্য হয়ে, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে বণিককে খুশি করতে পাখি গান করে গেলো দিনের পর দিন। 

কিছু দিন পর বণিক আবার বাণিজ্যে যাবে সেই দূর দেশে। যাবার আগে পাখির কাছে গিয়ে বললো: ‘পাখি, আবার তোমার দেশে যাচ্ছি। দেশের বন্ধুদের জন্যে তোমার কোনো বার্তা আছে কি?’ পাখি বললো: ‘বন্ধুদের কারও সঙ্গে দৈবাত্‌ দেখা যদি আপনার হয়েই যায়, তাদের জানাবেন, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে আপনার জন্য গান গেয়ে মহা সুখে আছি আমি। আমার সুখের বর্ণনা শুনেই বার্তা যা পাবার তারা পেয়ে যাবে এবং আমার কী করণীয়, আপনাকে দিয়ে সেটাও ইঙ্গিতে বলে পাঠাবে।’ 

বাণিজ্য সেরে বণিক আবার সেই বনে গিয়ে দেখলো পোষা পাখির বুনো জাতভাইয়েরা গান গেয়ে গাছে গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে। ‘তোমাদের কি স্মরণ আছে, বহু দিন আগে তোমাদের এক বন্ধুকে আমি আমার দেশে নিয়ে গিয়েছিলাম? তোমরাতো কত কষ্টে গাছের উপর বাসা বেঁধে থাকো। তোমাদের বন্ধুকে আমি সোনার খাঁচায় রেখেছি। সে তোমাদের জানাতে বলেছে, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে আমার জন্য দিনরাত গান গেয়ে সে মহা সুখে আছে।’  

বণিকের বক্তব্য কানে যাওয়া মাত্র কয়েকটি পাখি গাছের ডাল থেকে দুপদাপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। কী ব্যাপার? কাছে গিয়ে বণিক দেখলো, সবগুলো পাখি মারা গেছে। খুবই মন খারাপ করে বণিক সেই বন থেকে বের হলেন। দেশে ফিরে এসে পাখিকে দুঃসংবাদটা দিতেও বণিকের খুবই খারাপ লাগছিল।

দেশের বন্ধুদের মৃত্যুসংবাদ শোনা মাত্র পোষা পাখিটি জ্ঞান হারিয়ে রূপার দাঁড় থেকে সোনার খাঁচায় তলায় পড়ে গেলো। প্রিয় পাখির মৃত্যুতে খুবই  মন খারাপ হলো বণিকের। মৃতদেহ বের করার উদ্দেশ্যে খাঁচার দরজা যেই খোলা হলো, পাখিটি ফুরুত্‌ করে উড়ে গিয়ে বসলো বাড়ির সামনে একটি গাছের উচু ডালে। 

প্রিয় পাখি এভাবে প্রতারণা করাতে বণিক যতটা না অবাক হলেন, তার চেয়ে বেশি দুঃখ পেলেন মনে। খাঁচায় ফিরে আসার আকুল আহ্বানে বিন্দুমাত্র সাড়া না দিয়ে পাখি বললো: ‘ওরে মূর্খ বণিক! আমার একটি বন্ধুও মারা যায়নি। খাঁচা থেকে মুক্তি কীভাবে পেতে হয়, সেই কৌশল আমাকে শেখানোর জন্যে তারা মরার ভান করেছিল!’ 

‘তুমি কি সুখী ছিলে না পাখি, আমার সোনার খাঁচায়? কোন অভাবটি তোমার আমি অপূর্ণ রেখেছিলাম?’ উত্তরে পাখি বললো: ‘শোনো বণিক, পাখি মাত্রেরই একটিই আকাঙ্ক্ষা থাকে: মুক্ত আকাশে ইচ্ছামতো সে উড়ে বেড়াবে। কোনো খাঁচায় এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ হয় না, সোনা কিংবা লোহা, খাঁচা যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন। 

জনগণও পাখির মতো। অপশাসনের খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে সুনীল আকাশে তারা উড়তে চায়। বেশির ভাগ শাসক সে জিয়া হোক, হাসিনা হোক, কিংবা ইউনুস, নিজের স্তুতিগীত শোনার স্বার্থে জনগণকে আটকে রাখতে চায় এক বা একাধিক খাঁচায়। মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় শাসক বদলাতে গিয়ে জনগণ ভুল করে বার বার খাঁচা বদলায়। 

বাঙালির জীবনে খাঁচার কোনো শেষ নেই, ‘পাকিস্তান’ ছিল (কিংবা এখনও আছে) একটা খাঁচা, এখন ধর্ম হয়েছে আরেকটা কঠিন খাঁচা। ‘পাকিস্তান’ নামক খাঁচা থেকে মুক্ত করেছিলেন একজন শেখ মুজিব, কিন্তু সেই মুক্তিদাতাকে যে বেঈমান বাঙালিরা দুই দুই বার হত্যা করেছে, তাদের কপালে যে ভয়ঙ্কর একাধিক খাঁচা থেকে মুক্তির আশু সম্ভাবনা নেই, তাতে সন্দেহ কী?
সোর্স: এফবি

কি আছে এই ডিস-ক্লোজার চুক্তিতে
Dr Mozahedul Hoque Repon এর ওয়াল থেকে নেওয়া।
---------------‐--------------------------------------------------------
২১ পাতার চুক্তির কপিটি মোটা দাগে ৬ ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ ৬ ধরনের শতাধিক শর্ত সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে চুক্তিতে। এগুলো হলো—কর সংক্রান্ত শর্ত, অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত শর্ত, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত শর্ত, রুলস অব অরিজিন সংক্রান্ত শর্ত, অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত এবং বাণিজ্যিক শর্ত। 

অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত এবং বাণিজ্যিক শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও চাপের বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। এসব শর্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি যেমন নিশ্চিত করা হয়েছে। তেমনি চীনা আমদানি কমাতেও এতে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে।  

অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত শর্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, মার্কিন বিভিন্ন মানসনদ বাংলাদেশকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নিতে বলা হয়েছে। আর যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো আইন প্রণয়ন কিংবা স্ট্যান্ডার্ড স্থাপন করতে পারেনি, সেসব ক্ষেত্রে মার্কিন স্ট্যান্ডার্ড প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়েছে। যাতে মার্কিন পণ্য অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। 

বাণিজ্যিক শর্ত (৬টি)

১. মার্কিন সামরিক ইকুইপমেন্ট আমদানি বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে এবং চীনা সামরিক পণ্য আমদানি কমাতে হবে।

২. রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমানের মাধ্যমে মার্কিন বেসামরিক উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়াতে হবে।

৩. মার্কিন জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধি নিশ্চিত করত হবে বাংলাদেশকে। এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে হবে।

৪. সামাজিক নিরাপত্তা খাতের জন্য মার্কিন গম আমদানি বাড়াতে হবে।

৫. সামরিক বাহিনী ও সরকারি সংস্থার জন্য মার্কিন সয়াবিন তেল আমদানি বাড়াতে হবে। এবং সয়াবিন সংরক্ষণের জন্য মার্কিন কোম্পানির অংশীদারিত্বে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।

৬.মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানাতে হবে। 

 অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত (৬টি) 

১. জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও শিপিং খাতের বিকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।  

২. বন্দর, জেটি ও জাহাজে চীনের তৈরি লজিস্টিকস সিস্টেম লগিঙ্ক (LOGINK) ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই ব্যবস্থাটি এরই মধ্যে নিরাপত্তা অজুহাতে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

৩. ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের মার্কিন পণ্য দেশটিতে রপ্তানি, পুনঃরপ্তানি করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

৪. ইউএস উৎপাদিত ও নিয়ন্ত্রিত পণ্যের আমদানি সংক্রান্ত সকল কাস্টমস তথ্য দেশটিকে দিতে হবে। 
যাতে মার্কিন সংস্থাগুলো লেনদেন চিহ্নিত করতে পারে।
 
৫. বাংলাদেশকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সিভিল ও ক্রিমিনাল ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অংশীদার করতে হবে। 

৬ বিভিন্ন দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত এমন ধরনের সফটওয়্যার তৈরিতে স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে।   

ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত শর্ত (৫টি)

১. তথ্য আদান প্রদানে বৈশ্বিক ক্রস-বর্ডার গোপনীয় নীতিমালা সিবিপিআর এবং পিআরপি স্বীকৃতি দিতে হবে বাংলাদেশকে।

২. ব্যক্তিগত ডেটা গোপনীয়তা নীতিমালা প্রণয়নে মার্কিন সরকার ও দেশটির বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা বাড়াতে হবে। এবং ফিডব্যাকের প্রতিফলন থাকতে হবে।

৩. সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ ২০২৫—এ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত সেফগার্ড নিতে হবে। সাইবার অপরাধের কঠোরতর সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ২০২১ সালের ওটিটি নীতিমালা সংশোধন অথবা বাতিল করতে হবে। যাতে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড সেবায় শনাক্তকরণ শর্ত না থাকে।

৫. ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাহার্টসের স্পেকট্রাম এলপিআই ও ভিএলপিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

কর সংক্রান্ত শর্ত মার্কিন পণ্য রপ্তানিতে ৩ ধরনের শুল্ক কমাতে বলেছে দেশটি। এগুলো হলো কাস্টমস ডিউটি, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি এবং রেগুলেটরি ডিউটি।

১৩ খাতে নন ট্যারিফ বাধা সংক্রান্ত শর্তঃ 

ওষুধ, কৃষি, পরিবেশসহ ১৩ খাতে নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার বা অশুল্ক বাধা চিহ্নিত করে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রায় অর্ধশত শর্ত দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

মেডিকেল ডিভাইসেসঃ

চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত মার্কিন প্রযুক্তি পণ্য আমদানিতে বেশকিছু বাধা চিহ্নিত করেছে দেশটি। এসব বাধা দূর করতে ৪টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তে মূলত মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ’র সনদ বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে মেডিকেল ডিভাইস রেগুলেটরি আন্তর্জাতিক ফোরাম-আইএমডিআরএফ এর সদস্য হতে বলা হয়েছে।

ফার্মাসিউটিক্যালসঃ

বাংলাদেশের ওষুধ খাতেও বড় নজর দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ওষুধের বাজার বিস্তৃত করতে এফডিএ’র সনদ বিনাপ্রশ্নে মেনে নেওয়ার শর্ত দিয়েছে ইউএসটিআর। মার্কিন টেরিটরির ভেতরে উৎপাদিত কিংবা এফডিএ অনুমোদিত যে কোনো উৎপাদন কেন্দ্রে তদারকি করতে পারবে না বাংলাদেশ।    

মোটর গাড়ি ও যন্ত্রাংশঃ

 মার্কিন গাড়ির প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে সব ধরনের বৈষমমূলক ব্যবস্থা তুলে নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রবেশাধিকার দিতে হবে মার্কিন মোটর ভেহিকেল নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এফএমভিএসএস এর আওতায় উৎপাদিত যে কোনো অটোমেটিভ পণ্য। অর্থাৎ মার্কিন গাড়ি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে বাড়তি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শর্ত আরোপ করা যাবে না। 

পুনঃউৎপাদিত পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃউৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ছাড়তে বাড়তি কোনো লাইসেন্সিং বা পরীক্ষার শর্ত দেওয়া যাবে না।   

কৃষিঃ 

কৃষিখাতের অশুল্ক বাধা দূর করতে কড়া অবস্থানে মার্কিং যুক্তরাষ্ট্র। কৃষির বিভিন্ন উপখাতে বেশকিছু শর্ত বাস্তুবায়ন করতে বলেছে দেশটি। এসব উপখাতে মার্কিন বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সনদ মেনে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের শর্তের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে। যেমন ডেইরি খাতে নিরাপত্তায় কমপক্ষে মার্কিন স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলার শর্ত দেওয়া হয়েছে। মার্কিন সংস্থাগুলোর দেওয়া হালাল সনদও মেনে নিতে শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আমদানি সনদ সংক্রান্তঃ 

আমদানি সনদ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয় তা দ্রুত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানাতে হবে। মার্কিন খাবার ও কৃষিপণ্য আমদানিতে অনুমতি পত্র চাইতে পারবে না বাংলাদেশ। 

মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত শর্তঃ 

মেধাস্বত্ব মার্কিন শুল্ক আলোচনার উল্লেখযোগ্য দিক। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি মেধাস্বত্ব আইন বাস্তবায়নে চাপ দিয়ে আসছে। দেশটির অভিযোগ আইপিআর না মেনে বাংলাদেশ নানা ধরনের নকল পণ্য উৎপাদন করছে। মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত ১৩টি আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেশনে যুক্ত হতে বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে দেশটি। এগুলোর মধ্যে আছে ব্রাসেলস কনভেনশন, মাদ্রিদ প্রটোকল, সিঙ্গাপুর চুক্তি, প্যাটেন্ট আইন চুক্তি, মারাকেশ চুক্তি, হেগ এগ্রিমেন্ট, বুদাপেস্ট এগ্রিমেন্ট ইত্যাদি।   

সেবাখাত ও বিনিয়োগ সংক্রান্তঃ 

সেবাখাতের কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক রিইন্সুরেন্সের বিধান বাতিল করতে বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সার্ভিস ডামেস্টিক রেগুলেশনে যুক্ত হতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশকে।   

অনতি বিলম্বে মার্কিন ফার্মগুলোর সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি মুনাফা প্রত্যাবাসনে কোনো বাধা রাখা যাবে না। তেল, গ্যাস, ইনস্যুরেন্স ও টেলিকম খাতে মার্কিন কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়াতে মালিকানা সংক্রান্ত বাধা দূর করতে হবে। মার্কিন ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো নো অবজেকশন সার্টিফিকেট-এনওসি দিতে হবে। 

শ্রম সংক্রান্ত শর্তঃ 

বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিতে আইন সংশোধনসহ বেশকিছু বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসটিআরের দেওয়া চিঠিতে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, কারখানায় শ্রমিক সংগঠন করতে সম্মতিদাতা শ্রমিকের সংখ্যা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। ইপিজেডের শ্রমিকদের সংগঠন করার পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায্য দাবি আদায়ে জড়িত গার্মেন্টস শ্রমিক ও নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। 

পরিবেশ সংক্রান্ত শর্তঃ 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট বলেছে, আইন যেন পরিবেশের সুরক্ষা করে এটা বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে। কার্যকরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে বলেছে দেশটি। নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা বন্ধে সহযোগিতা বাড়াতেও শর্ত দিয়েছে ইউএসটিআর। বণ্যপ্রাণি পাচার রোধ, সমুদ্রে অনিয়ন্ত্রিত মাছ ও প্রাণি শিকার রোধেও নানা শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক নতুন পলাশীর প্রান্তরে

যেভাবে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বিপুল সৈন্যবাহিনী থাকা সত্ত্বেও ভিতরের বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরদের কারণে পরাজিত হয়েছিলেন, ঠিক আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট যেন সেই ইতিহাসের ভয়াবহ পুনরাবৃত্তি!

সেই পলাশীর যুদ্ধে যেমন ইংরেজরা "ব্যবসার আজ" এসে শাসনের খুঁটি গেড়ে দিয়েছিল, ঠিক তেমনই  আমেরিকা তার বন্ধুত্বের মুখোশে নতুন এক আধিপত্যের শিকল পরাতে চায় বাংলাদেশকে। গোপালগঞ্জের নীরবতা যখন বজ্র নীরবতায় পরিণত হয়, তখনই ইতিহাস বলে—Chat ভয়াবহ চুক্তি জনগণের অগোচরে সম্পন্ন হয়েছে। কী সেই চুক্তির শর্ত? কেন তা গোপন? জনগণের হাতে কেন নেই সেই তথ্যে প্রবেশাধিকার?

আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক নতুন পলাশীর প্রান্তরে। দেশের অভ্যন্তরে জন্ম নিয়েছে একাধিক মিরজাফর। যারা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে, নিজেদের বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। ঢাকায় যেভাবে একটি কথিত আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের নামে বাংলাদেশকে পগরিণত করা হলো একটি গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাঠে, সেটি নিছক চুক্তি নয়—এটি একটি জাতীয় আত্মসমর্পণ।

আমরা কি জানি না, আফ্রিকার বহু দেশ—দক্ষিণ সুদান, বুরুন্ডি, সোমালিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া—সবাই মার্কিন আগ্রাসনের "সহযোগী চুক্তির" মাধ্যমে কীভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে? সেখানে মার্কিন বাহিনী, কনসালট্যান্ট, থিংক ট্যাংক, এনজিও আর সামরিক অফিসাররা কিভাবে গোঁজামিল দিয়ে দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্র এবং নিরাপত্তাকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে? আর সেই একই মডেল আজ আমাদের দেশেও বসাতে চায় এই ইউনুসীয় চক্র, তথাকথিত কিংস পার্টি এবং বিদেশী দালালদের সমন্বয়ে গঠিত এই ছায়া-রাষ্ট্র।

আঞ্চলিক অফিস খুলে দেওয়া মানে হচ্ছে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব খণ্ডিত করা। মানে হচ্ছে, আগামীতে দেশের প্রতিটি প্রান্তরে বাইরের শক্তির নজরদারি প্রতিষ্ঠিত হওয়া। মানে হচ্ছে, আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক বাহিনী, প্রশাসন—সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে একটি বিদেশি ব্যবস্থার ছায়া কার্যকর হওয়া।

এমনকি পাশের দেশ মিয়ানমার, যেখানে সামরিক জান্তা সরকার আছে, সেখানেও এই আঞ্চলিক অফিস করতে দেয়নি তারা। তারা বুঝেছে—একবার ঢুকতে দিলে, আর বের করা যাবে না। অথচ বাংলাদেশ, যাদের ইতিহাসে স্বাধীনতার জন্য রক্ত ঝরেছে, সেই দেশের শাসকরা আজ এই দেশকে ফের একবার উপনিবেশ বানাতে মুখিয়ে!

এই চুক্তির পরিণতি হবে ভয়াবহ। এর অর্থনীতি, কূটনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তিতে যে বিপর্যয় ডেকে আনবে, তা এখনো অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—এই ধরনের চুক্তির পর কখনো কোনো দেশ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

এখনই সময়, আমরা প্রতিবাদ করি। জাতিকে জাগিয়ে তুলি। শহর থেকে গ্রামে, ক্যাম্পাস থেকে কারখানায়, প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে বলতে হবে—বাংলাদেশ কোনো ল্যাবরেটরি নয়। এই দেশ কোনো বিদেশি প্রজেক্টের পরীক্ষার মাঠ নয়।

পলাশীর মিরজাফরদের যেমন ইতিহাস ক্ষমা করেনি, আজকের বিশ্বাসঘাতকরাও রেহাই পাবে না। আজ আমাদের কণ্ঠে থাকতে হবে বজ্রের মতো আওয়াজ—না, আর নয়!

বাংলাদেশ কারো করুণার দেশ নয়। বাংলাদেশ যুদ্ধ করে অর্জিত, রক্তে গড়া স্বাধীন ভূখণ্ড। একে আধিপত্যবাদী চক্রান্তের সামনে মাথানত করতে দেওয়া হবে না।

আজকের এই প্রতিবাদ হোক আগামী প্রজন্মের জন্য রক্ষাকবচ।

জয় বাংলা, 
জয় স্বাধীনতা।
সোর্স: এফবি

১৮জুলাই
আজ একটা গল্প বলি,

৯ অক্টোবর ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করি আমরা দুই জমজ ভাই। জন্মের পর থেকেই আমরা নাকি গোলগাল প্রকৃতির ছিলাম। একইরকম দেখতে হওয়ায় অনেক সুবিধাও নিয়েছি—একজন আরেকজনের হয়ে। যখনই মাটিতে কিছু পড়ে থাকতে দেখতাম, সাথে সাথে দু’জন দৌড় দিতাম—কে আগে সেটা বারান্দা দিয়ে বাইরে ফেলে দেবে! বারান্দা বন্ধ থাকলে বাথরুমে কমোডে ফেলে দিতাম আর খিলখিল করে হাসতাম। স্বর্ণের চেইন থেকে শুরু করে পায়ের জুতো—কোনো কিছুই আমাদের জন্য মাটিতে রাখা যেত না।

জীবনে এরকম কত যে পরীক্ষা একে অপরের হয়ে দিয়েছি! কোনো শিক্ষক আজ পর্যন্ত ধরতেই পারেনি। এভাবেই আমাদের বড় হয়ে ওঠা—একসাথে। বুঝ হওয়ার পর থেকেই দু’জনের মধ্যে সবসময় প্রতিযোগিতা লেগেই থাকত। যদিও পড়ালেখায় ওর থেকে কখনো এগিয়ে থাকতে পারিনি, তবে ফ্রিল্যান্সিং থেকে শুরু করে অন্য সবকিছুতে আমাদের টক্কর হতো সমানে সমানে।

আর একটা জিনিস ছিল—ওর সাহস। সেই সাহসের উদাহরণ দিতে গেলে গল্প শেষ হবে না। ছোট থেকে বড় হওয়ার এই যাত্রায় আমরা প্রায় সারা বাংলাদেশ একসাথে ঘুরে বেরিয়েছি—কি করি নাই একসাথে!

১৭ জুলাই ২০২৪—মুগ্ধর মৃত্যুর একদিন আগেও আমরা প্রায় রাত ১টা পর্যন্ত একসাথে কাজ করে ঘুমাতে গিয়েছিলাম। সেই রাতেও প্রতিদিনের মতো মশারি টানানো নিয়ে আমাদের ঝগড়া হয়—এটা ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মুগ্ধ নিজেই ডেকে আমাকে উঠিয়ে দিল। এমন আগে কখনো হয়নি—ও ঘুমের মধ্যে থেকে আমাকে ডেকেছে! আমাকে ঘুম থেকে তুলে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো—বিশেষ করে আম্মুকে নিয়ে। বলছিলো, ‘‘আম্মু সারাজীবন আমাদের জন্য কষ্ট করেছে, কিভাবে আম্মুকে নিজের টাকায় একটা ফ্ল্যাটে উঠাবে…’’ ওর খুব শখ ছিলো—নিজের টাকায় একদিন আম্মুকে নতুন ফ্ল্যাটে তুলবে।

একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ভিডিও বের করে দেখাচ্ছিলো—বলছিলো, ‘‘এখন খুলনায় থাকা উচিত ছিলো, জুনিয়রদের হেল্প করতে পারতাম।’’ কথা বলতে বলতে প্রায় ৩টা বেজে গেলো, তবু ওর কথা শেষ হয় না। আমার তখন একদিন আগের এক্সিডেন্টে হাতের নখ উঠে গিয়েছিলো, ৫টা সেলাই—ভীষণ ব্যথা করছিলো। তাই একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘‘কি শুরু করলি? ঘুমাতে দে।’’

এটাই ছিলো মুগ্ধর সাথে কাটানো আমার শেষ রাত।
সবচেয়ে বেশি ঝগড়া হতো জামাকাপড় নিয়ে। পরের দিন আন্দোলনে যাওয়ার সময় ও আমারই একটা জামা পরে বের হয়, আর যখন জানতে পারি ওর গায়ে গুলি লেগেছে—তখন আমিও ওর একটা শার্ট গায়ে দিয়ে বের হই। যখন মুগ্ধকে হাসপাতালে প্রথম দেখি—মনে হচ্ছিলো কি আরাম করে ঘুমাচ্ছে, এক শান্তির ঘুম! বোঝার কোনো উপায় ছিলো না যে ও আর নেই। মায়ের পেট থেকে যে একসাথে বেরিয়েছি—সে কিভাবে এভাবে একা চলে যায়?

সারা রাত ওর লাশের গাড়ির পাশে বসে ছিলাম—ঠিক প্রতিরাতের মতোই। পার্থক্য একটাই—গত রাতে ওর ভেতরে প্রাণ ছিলো, আজ আর নেই।
যতবারই সেদিন ওকে দেখেছি—মনে হচ্ছিলো ওর শরীর থেকে আলো বের হচ্ছে। জীবনে ওকে এতটা সুন্দর আর কখনো লাগেনি। এক পর্যায়ে মনে পড়লো—আম্মু-আব্বু তো তখনো জানে না মুগ্ধ আর নেই! তারা তখনো চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিলো। ভাবছিলাম, মা যখন মুগ্ধকে এই অবস্থায় দেখবে, তখন কী হবে?

অবশেষে সকালে তারা এলো। মুগ্ধর পাশে গিয়েই জানলো—মুগ্ধ আর নেই। সেইদিন শক্ত শাবল ভাইকে দেখলাম কিভাবে নিরীহ শিশুর মতো লাশের গাড়ি ধরে বিনা শব্দে কাঁদছিলো। কাঁদবেই বা না কেন? চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় আব্বু-আম্মু কিছু বুঝতে না পারে, সেই অভিনয় করতে গিয়ে ওর চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো—সেইদিনই একবারে বের হলো সব।

আম্মু বলতো—‘‘তোমাদের দু’জনকে একসাথে মানুষ করতে করতে আমার জীবনটা পানি হয়ে গেছে।’’ যাদের জমজ সন্তান আছে তারা জানে—দু’জনকে একসাথে বড় করা কতটা কঠিন। সেই আম্মুকে দেখলাম—কিভাবে নির্বাক হয়ে মুগ্ধর কপালে শেষ চুমু খেলো। চুমুর দৃশ্যটা দেখে মনে হচ্ছিলো—এক মা কপালে চুমু দেয়, আর আরেক মা, যাকে আমরা ‘‘দেশ’’ বলি—সে কপালে গুলি চালায়।

আজ এতটুকুই থাক।
তারপর কীভাবে মুগ্ধকে কবর দেয়া হলো? কীভাবে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত আমাদের ব্ল্যাঙ্ক চেক আর হুমকি-ধামকির মাধ্যমে কিনে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে—সেসব গল্প আরেকদিন বলবো।

যারা বাঁচে, তাদের দায় বেশি। কথা আছে—‘‘সত্য মরে না।’’ মুগ্ধর গল্পও শেষ হবে না—কারণ ওর স্বপ্নগুলো এখন আমাদের শ্বাসে বাঁচে।

জোট, ভোট ও নোটের রাজনীতি – ৬ষ্ঠ পর্ব

গোপালগঞ্জ ট্র্যাজেডি ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক শঙ্কা
___ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী

গোপালগঞ্জ ট্র্যাজেডি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত। শুরুতেই জুলাই আন্দোলনের বীর সৈনিকদের উপর গোপালগঞ্জে যে বর্বরোচিত আচরণ করা হয়েছে, সেটার নিন্দা জ্ঞাপন করছি। গোপালগঞ্জে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কোন পক্ষ দায়ী, ইতিমধ্যেই সে দোষারোপের অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়ে গেছে। সন্দেহাতীতভাবেই এ কথা বলা যায়, পরাজিত, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর ও অনুসারীরাই দায়ী – এতে তো কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আত্মসমালোচনা করতে গেলে, বিভিন্ন পক্ষের কতক ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত, কতক ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত ভুল চলে আসে।

আমার দৃষ্টিতে জুলাইয়ের ০১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এনসিপি সারা দেশে পদযাত্রার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক ভিত্তিকে যেভাবে মজবুত করে ফেলেছিল এবং সারাদেশে নতুন ধারার রাজনীতির যে চর্চা তৈরির সুযোগ তারা সৃষ্টি করেছিল, তার অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে গোপালগঞ্জ পথযাত্রার মাধ্যমে।

আমার দৃষ্টিতে গোপালগঞ্জে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে তা আগ থেকেই তাদের বোঝা উচিত ছিল। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা রিপোর্ট তাদের কতটুকু সাহায্য করেছে, সেটাও একটা প্রশ্ন বটে। নিঃসন্দেহে গোপালগঞ্জ বাংলাদেশেরই একটি জেলা। শুধু এনসিপি নয়; যেকোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ সেখানে হতে পারে; এটা কথিত গণতান্ত্রিক অধিকার বলে। কিন্তু কখনো কখনো বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার দৃষ্টিকোণ থেকে চরম সাহসিকতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কাজকে avoid করতে হয়। আমার মনে হয়, সে দৃষ্টিকোণ থেকে এনসিপি গোপালগঞ্জের প্রোগ্রাম avoid করলেই ভালো হতো। আপাতত বলবো, রাজনীতি হচ্ছে যুদ্ধের মতো। যুদ্ধে যেভাবে জয় এবং পরাজয় উভয়টিকে মেনে নিতে হয়, রাজনীতিতেও সফলতা এবং ব্যর্থতা দুটোকেই মেনে নিতে হয়। জুলাই যোদ্ধা ও সৈনিকদেরকে আমার পক্ষ থেকে পরামর্শ থাকবে – গোপালগঞ্জের এই বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য তারা যেন তাদের ইস্পাতকঠিন দৃঢ় চেতনাকে খর্ব না করে; বরং আরও সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সাথে যেন এগিয়ে যায়। এটাই তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে।

বিগত বর্তমান সরকার দায়িত্বে আসার পর থেকে সফলতার চেয়ে তাদের ব্যর্থতার দিকগুলোই বেশি ফুটে উঠেছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো খুব একটা সফলতার পরিচয় দিতে পারেনি। জুলাই সনদ প্রকাশে কিংবা মৌলিক অনেক সংস্কার ইস্যুতে অনেকগুলো বিষয়েও তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি; বরং আমরা দেখতে পারছি, রাজনীতির অঙ্গনে ইতিমধ্যেই টক্সিন ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক নেতাগণ একে অপরকে ঘায়েল করার ক্ষেত্রে এমন সব সংলাপ, বিবৃতি ও ভাষণ দিচ্ছেন – যা রীতিমতো বিষ উদগীরণ করার মতোই। যদি এই অবস্থা চলমান থাকে, তো অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার এবং যে বিপর্যয় নেমে আসবে তার খেসারত সকল স্টেকহোল্ডার, সকল পক্ষ; এমনকি অরাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকেও দিতে হবে।

মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, কয়েকটি বিষয়ে ইতিমধ্যেই তাদের ঐকমত্যে পৌঁছা উচিত। তা হচ্ছে –

১/ ভারতীয় আধিপত্য ও প/শ্চি/মা আধিপত্যবাদমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
২/ পাশাপাশি যে কোন আ/গ্রা/সন থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখার জন্য “মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স” গড়ে তোলা।
৩/ তৃতীয়ত: বাংলাদেশকে একটি টেকসই অর্থনীতির ওপর গড়ে তোলা।

রাজনৈতিক অনৈক্য ও বিভেদের মাধ্যমে এগুলো কখনোই বাংলাদেশের সম্ভব নয়; বরং বিগত অর্ধ শতাব্দী যেভাবে বাংলাদেশে হানাহানি, সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং পাওয়ার পলিটিক্সের ধারা চলে এসেছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ সে ধরনের একটি পুরনো কুসংস্কারপূর্ণ রাজনৈতিক ধারাতেই ফিরে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে বিভেদ এবং মতানৈক্য তা অনভিপ্রেত। বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল চাচ্ছে বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে একেবারেই নির্বাসিত করে দেওয়া। পাশাপাশি বিএনপির মধ্যেও (অনেকের মধ্যে) এক রকম দাম্ভিকতা চলে এসেছে যে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তারাই ক্ষমতায় যাবে। আমি মনে করি, এসব দিকই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নেতিবাচক দিক। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশই তৈরি হবে না। অতএব, কখনোই বিএনপির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে যা সম্ভব হবে না। অপরদিকে সব রাজনৈতিক দল মিলে যদি বিএনপিকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করে, তাহলে যে পলিটিক্যাল ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি হবে, সেজন্য বাংলাদেশ এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে ধাবিত হবে। তাতেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা এবং একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা অনিশ্চিত হবে।

দুঃখজনক সত্য যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব যারা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যেও রয়েছে যথেষ্ট ইনসাফের অভাব। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের বুদ্ধিজীবীরাই ব্র্যাকেট বন্দী হয়ে আছেন। তারা এমন কোন পরামর্শ নিজ দক্ষতা অনুযায়ী নিজ দলকে দেন না – যেটি দলীয় স্বার্থের বিপক্ষে যায়। যতদিন পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মানুষগুলো বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের টাকা-পয়সা কামাই করে পকেট ভারি করাই সম্ভব হবে। টকশোগুলোতে টকারু হিসেবে পাণ্ডিত্য ঝাড়ার সুযোগ হবে; কিন্তু দেশ ও জাতির জন্য তারা কিছুই করতে পারবে না।

এনসিপির উচিত শক্ত ভিত্তির উপর তাদের রাজনৈতিক ভিতকে গড়ে তোলা। তার জন্য আমি বলবো, জাতীয় নাগরিক পার্টি; তাদের দলে প্রবীণ কিছু রাজনীতিবিদদেরও স্থান করে দেওয়া উচিত। তার কারণ হলো রাজনীতির দুটো দিক। যথা –
Theoretical politics
Applied politics

Theoretical politics-এ যথেষ্ট মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেন – এরকম অনেক লোক এনসিপিতে আছেন; যারা দর্শন, আইন বিভাগ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আছেন। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য Theoretical politics করার চেয়েও দরকার Applied politics। ব্যবহারিক রাজনৈতিক জ্ঞান ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সে কথার সাক্ষ্য দেয়।

৭৫ ট্র্যাজেডিতে বাকশালের পতনের পর আধিপত্যবাদ বিরোধী, সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভর একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। তিনিও যখন বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া প্রবীণ কিছু রাজনীতিবিদকেও তিনি তার দলে জায়গা করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের হত্যার পরে আমরা দেখেছি যে, জেনারেল এরশাদ যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসলেন, তিনিও জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি – উভয় দল থেকেই পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতাদেরকে জায়গা করে দিয়েছিলেন।

তার কারণ হচ্ছে – তৃণমূল পর্যায় থেকে যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করে বড় হয়েছেন, রাজনৈতিকভাবে পোড় খাওয়া – বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেকোনো রাজনৈতিক দলকে শক্ত ও মজবুত রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রবীণ পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের প্রয়োজন আছে। আমার মনে হয়, এদিকটিতে এনসিপি অনেকটাই পিছিয়ে আছে। “জুলাই বিপ্লবের” সৈনিকগণ দুঃসাহসী জাতীয় বীর – তাতে কোন সন্দেহ নাই; কিন্তু তাদের ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে, বিবেককে পরিহার করে শুধুমাত্র আবেগপ্রবণ হয়ে রাজনীতি করতে গেলে, তাদেরকে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হতে পারে।

সেজন্য আমার পক্ষ থেকে এনসিপিকে কয়েকটি পরামর্শ:

প্রথমত: প্রত্যেক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিছু স্তম্ভের উপর। অর্থাৎ সেই রাজনৈতিক দলের মৌলিক আদর্শ কী? এনসিপিকে তার মৌলিক আদর্শগুলো কী – তা নির্ধারণ করতে হবে। তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে পরামর্শ থাকবে – যেহেতু বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র, সেহেতু এ দেশের ইসলাম ও মুসলমানকে বাদ দিয়ে দেশের স্বাধীনতাকেও কল্পনা করা যায় না। অতএব, এনসিপির মৌলিক আদর্শের মধ্যে প্রথমেই যে বিষয়টিতে স্থান বিবেচনায় আনা উচিত – তারা যেন ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী হন।

দ্বিতীয়ত: রাজনৈতিকভাবে তাদের স্পষ্ট করতে হবে জাতির কাছে যে, ভারতীয় আধিপত্যবাদের পাশাপাশি প/শ্চি/মা আ/গ্রা/সন থেকেও বাংলাদেশকে তারা মুক্ত রাখবে।

তৃতীয়ত: যে বিষয়টিতে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে সেটি হচ্ছে – দেশবিরোধী যেকোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে তাদের ইস্পাতকঠিন অবস্থানে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়াতে হবে। আমরা দেখতে পেয়েছি ইতিমধ্যে দেশবিরোধী কিছু ইস্যু মাথাচাড়া দিয়েছিল, তার মধ্যে –
১. করিডর ইস্যু
২. বন্দর ইস্যু

বর্তমানে চলমান যে বিষয়টি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, সেটা হচ্ছে – ঢাকায় “জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন” স্থাপন। এ বিষয়গুলোতে এনসিপি একেবারেই নিশ্চুপ – যা এ দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে অনাস্থার সৃষ্টি করে।

আমাদের জেনে রাখা উচিত এবং গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত – যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আস্থা না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কখনোই সে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হেদায়েত করুন, সফলতা দান করুন।
 

নিজের উচ্চতা দিয়ে সবাইকে নীরব করে দেন
কথায় আছে, ঈগলের পিঠে চেপে বসতে পারে একমাত্র পাখি হলো কাক। এই কাক কখনো কখনো ঘাড়ে ঠোকর মেরে, তাকে বিরক্ত করার দুঃসাহস দেখায়। কিন্তু ঈগল কি করে? সে কি তার এই বিরক্তিকর সঙ্গীর সাথে লড়াইয়ে নামে? না, ঈগল শুধু করে একটি কাজ – সে আরও উঁচুতে উড়ে যায়। যেখানে কাক টিকতে পারে না, শ্বাস নিতে পারে না। শেষমেশ কাক নিজেই হাল ছেড়ে পিঠ থেকে পড়ে যায়।

এই বাস্তবতা আমাদের জীবনের জন্যও এক অনন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের চারপাশে অনেক কাক-স্বরূপ মানুষ রয়েছে – সমালোচক, হীনমন্য, ঈর্ষান্বিত, যারা আপনার সাফল্যকে হজম করতে পারে না। তারা কখনো আপনাকে ছোট করার চেষ্টা করবে, কখনো আপনার বিশ্বাসে আঘাত করবে। বন্ধুর ছদ্মবেশে, সহকর্মীর মুখোশে, এমনকি কাছের আত্মীয়রাও হতে পারে এই কাক-চরিত্রের ধারক।

কিন্তু আপনি যদি তাদের পাল্টা উত্তর দিতে যান, তাদের অপমানের জবাবে উত্তরে সময় ব্যয় করেন, তবে আপনি ধীরে ধীরে আপনার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন। আপনি যদি ঈগলের মতো হন, তাহলে আপনাকে জানতে হবে – আসল লড়াইটা নিজেকে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, নিচে থাকা কাকের সাথে নয়।

আপনার সাফল্যই হবে সেরা প্রতিশোধ। যত সমালোচনা আসুক না কেন, আপনি যদি প্রতিনিয়ত নিজের কাজের মাধ্যমে উন্নতি করেন, আপনি যদি ধৈর্য ধরে নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখেন, তবে একসময় সেই সমালোচকরাই হার মানবে। কারণ আপনার উচ্চতা, আপনার মানসিক দৃঢ়তা, আপনার লক্ষ্য – এই সবই এমন জায়গায় নিয়ে যাবে যেখানে কাকেরা টিকতে পারবে না।

উচ্চতা মানে শুধুমাত্র সামাজিক মর্যাদা নয়, বরং এটি আপনার চরিত্র, আপনার ধৈর্য, আপনার সহনশীলতা, আর আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতীক। জীবনের এই পথচলায় যখনই কোনো কাক দেখবেন, নিজেকে মনে করিয়ে দিন – ঈগল কিন্তু কখনো কাকের সাথে লড়াই করে না। সে শুধু আকাশে আরও ওপরে উঠে যায়।

তাই আপনি যখন নিজের পথে হাঁটছেন, যখন চারপাশের মানুষ আপনাকে নিয়ে অকারণে বিচার করছে, তখন মনে রাখবেন – তারা আপনাকে নিচে রাখতে চায়, কারণ তারা জানে আপনি অনেক ওপরে যেতে পারবেন। আর আপনি যদি ঈগলের মতো হন, তাহলে তাদেরকে আপনার সাথে নিয়ে উঁচুতে উড়ুন, যেখানে তাদের টিকে থাকা অসম্ভব।

তাই সমালোচকের সাথে নয়, নিজের উন্নতির দিকেই মনোযোগ দিন। কারণ সত্যিকার বিজয় তখনই আসে, যখন আপনি প্রমাণ না দিয়ে নিজের উচ্চতা দিয়ে সবাইকে নীরব করে দেন।

সোর্স: এফবি

মন বাড়িয়ে ছুঁই 
পর্বসংখ্যা ০৫

সন্ধ্যা থেকেই বাড়ির অবস্থা থমথমে।ডাক্তারের ঔষুধে জ্বর কমেনা মেহনূরের। জ্বরতপ্ত অবস্থার জন্য লাল হয়ে গেছে শরীর। চেহারার অবস্থাও বেশ বির্বণ। একদিনের মধ্যে শরীরের সব সুস্থতা যেনো হারিয়ে গেছে ওর। সকাল থেকেই পেটে কিছু পরেনি মেহনূরের। মা ও বড়মা খাবারের জন্য  প্রচুর জোড়াজুড়ি করেছে, কিন্তু জ্বরাক্রান্ত মেহনূর কিচ্ছু মুখে তুলেনি। হান্নান শেখ আদরের নাতনীকে এ অবস্থায় দেখতে পারছিলেন না, বুকটা হাহাকার করে ছটফট করছিলো উনার। ডাক্তারকে এ পযর্ন্ত চারবার ডেকে ফেলেছেন তিনি, কিন্তু প্রতিবারই মোস্তফা ডাক্তার বিরক্ত গলায় বলেছেন সকাল পযর্ন্ত অপেক্ষা করতে, যদি অবস্থা আরো খারাপ হয় তাহলে দ্রুত শহরে ট্রান্সফার করতে হবে। এদিকে মারজাও জোর করে বৃদ্ধ হান্নানকে কিছু খাওয়াতে পারলেন না, নিরুপায় হয়ে বসে আছেন বাবামশাইয়ের সাথে। শানাজ, সাবা ও সুরাইয়া মেহনূরের পাশে বসে আছে। শানাজ ওর মাথার কাছে বসে একের-পর-এক তপ্ত কাপড় পানিতে চুবিয়ে কপালে পট্টি করছে। এদিকে সুরাইয়ার হাতে এখন শানাজের ফোন, সুরাইয়া একমনে সেটা নিয়ে বাংলা নাটক দেখছে। সাবা বিরস মুখে বসে থাকতেই হঠাৎ শানাজের পানে তাকিয়ে বলে, 

  - বুবু, ওকে কবিরাজ বাড়ি নিয়ে গেলে হয়না? ডাক্তারের টোটকায় তো জ্বরই কমছেনা। এমন করে চলতে থাকলে ও যে কঙ্কাল হয়ে যাবে জানোতো?

শানাজ কথাটা শুনেই চিন্তায় ডুব দিলো। জ্বরাক্রান্ত মেহনূরের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো। ভাবতেই চট করে সাবার দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বললো, 

  - কবিরাজ বাড়িতে সবাই গেলেও মেহনূর যাবেনা। তুই কি জানিস না, ওর যে বাইরে হওয়া নিষেধ? মেজো মা শুনলে কি অবস্থা করবে এখনই ভুলে গেলি? মেজো মা যদি একবার শুনে মেহনূরকে বাইরে পাঠানোর ফন্দি করা হচ্ছে, তাহলে তোর পিঠের ছাল তুলে দিবে সাবা। 

শানাজের ক্যাটক্যাট কথায় চুপ হয়ে গেলো সাবা। ফোন থেকে মুখ তুলে সরু চোখে তাকালো সুরাইয়া। সুরাইয়ার ওমন দৃষ্টি দেখে শানাজ চুপচাপ নিজের কাজে মগ্ন হলো, কিন্তু সুরাইয়া চুপ রইলো না। নিজের মায়ের নামে ওমন কথা কস্মিনকালেও সহ্য করতে পারেনা সুরাইয়া। তাই ফোনটা বিছানায় রেখে সজাগ দৃষ্টিতে শানাজের দিকে তাকালো, গমগমে গলায় বললো, 

  - শানুবুবু, আমার মা এমন কি করেছে যার কারনে মেহনূরের ব্যাপার নিয়ে উনাকে কটাক্ষ করছো? 

শানাজ ভিজা তোয়ালে চিপড়ে মেহনূরের তপ্ত গালটা মুছতেই বললো, 

  - তোর মা যে ভালো জাতের মানুষ তাই বলতে বাধ্য হই। আর শোন, এখানে বসে তর্ক করবিনা। ও অসুস্থ। এই মূহুর্তে একটা শব্দও উচ্চারণ করবিনা। যা বলার বাইরে যেয়ে বলবি, আপাতত চুপ থাক। 

শানাজের শক্ত আচরণ সুরাইয়ার ছোট থেকেই অপছন্দ। শানাজ সবার সাথে হাসিখুশি আচরণ করলেও সুরাইয়ার সাথে রণমূর্তি ধারণ করে ক্যাটক্যাট উত্তর দেয়। সুরাইয়া আর বসলো না মেহনূরের পাশে, একপ্রকার ক্ষোভ দেখিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। যাওয়ার সময় সাবাকেও টেনেটুনে সঙ্গে নিলে গেলো। শানাজ সব ঘটনা এমনভাবে অগ্রাহ্য করলো যেনো এখানে কিছু হয়নি। ওর মতো অসভ্য বোনকে শানাজ এমনেও হজম করতে পারেনা। প্রায় দুইঘন্টা মেহনূরের সেবায় শ্রম দিলো শানাজ, কিন্তু ফলপ্রসু হিসেবে কিছুই হলো না ওর। মাথায় হাত দিলে এখনো আগুনের মতো গরম। গতকাল এমন কি হয়েছে সেটাই কোনোভাবে মিলাতে পারছেনা শানাজ। বিছানার হেডসাইডে পিঠ লাগিয়ে বসলে হঠাৎ মেহনূর ঘোরের মধ্যে প্রলাপ বকতে থাকে। সবগুলো কথাই জড়িয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে এলোমেলো প্রতিটা কথা। শানাজ কপাল কুঁচকে বিড়বিড় করা মেহনূরের কাছে কান রাখলো। অস্ফুট সুরে মেহনূর বলছে, 

  - বাড়ি থেকে বিদায় করো, তাড়িয়ে দাও, দাদাভাই চলে যেতে বলো। 

শানাজ আশ্চর্য হতে গিয়ে নিজেকে শান্ত করে। মনকে সান্ত্বনা দেয় হয়তো জ্বরের ঘোরের হাবিজাবি বকছে। কিন্তু মেহনূর যখন একই কথা অজস্র উচ্চারণ করছে, তখন বাধ্য হয়ে ওর দুই বাহু ধরে কৌতুহল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, 

  - মেহনূর, তুই কি শুনতে পাচ্ছিস? তুই এগুলো কি বলছিস? মেহনূর, তাকা না। জবাব দে। মেহনূর?

জ্বরের জন্য তিল পরিমাণ চোখ খুলার শক্তি পেলোনা মেহনূর। যতোবার খুলতে যায় ততোবারই নেত্রপল্লব বন্ধ হয়ে আসে ওর। শানাজ অনেকবার চেষ্টা করে শেষে হার মানলো। আরেকবার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরটা একটু যেনো কমেছে। স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়তেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। শানাজ চকিত ভঙ্গিতে দরজার দিকে তাকালে নীতি ও প্রীতিকে দেখতে পেলো। দুজন অনুমতির জন্য অপেক্ষা না করে নিঃশব্দে রুমের ভেতর ঢুকলো। রুমে তখন সোলারের বাতি জ্বলছিলো, সিলিং ফ্যান বন্ধ। নীতি মৃদ্যু গলায় শানাজকে প্রশ্ন করলো, 

  - মেহনূরের অবস্থা কেমন? জ্বর কমেছে? 

শানাজ মলিন মুখে মেহনূরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে। শেষে নীতির দিকে মুখ ফিরিয়ে ক্লান্ত গলায় বলে, 

  - একটু কমেছে, বেশি কমেনি। ও যে কেনো এতো অসুস্থ হয়ে গেলো বুঝতে পারছিনা। বৃষ্টির পানিতে ভিজলেও ওর জ্বর আসেনা, সেখানে কোনো কারন ছাড়াই জ্বর আসলো। 

নীতি তৎক্ষণাৎ শানাজের মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। প্রীতির দিকে দৃষ্টি রেখে ঘন করে ঢোক গিললো। এখানে প্রীতির অবস্থাও ভীতু-ভীতু। নীতি ওকে ইশারায় শান্ত, স্বাভাবিক থাকতে বললো। প্রীতি সেটায় সায় বুঝিয়ে মাথা ' হ্যাঁ ' সূচকে দুলিয়ে ফেললো।নীতি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতেই হঠাৎ কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বললো, 

  - শানাজ, যদি কিছু মনে না করো একটা রিকুয়েস্ট করি? 

শানাজ প্রশ্ন শুনে কৌতুহলে বশীভুত হলো। হেডসাইড থেকে পিঠ সরিয়ে বিষ্ময়দৃষ্টিতে বললো, 

  - মনে করার তো কিছু নেই। কিন্তু কিসের রিকুয়েস্ট?

নীতি এবার ঠোঁট ভিজিয়ে শুষ্ক গলায় বললো, 
  - না মানে, আমার মেহনূরকে খুব ভালো লাগে। মিষ্টি একটা মেয়ে। ওর আজ এই অবস্থা দেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করছেনা। তাই ভাবলাম একটু যদি বসে থাকি? শানাজ আমরা তো চলেই যাবো, আর মাত্র তো কয়টা দিন। প্লিজ একটু থাকতে দিবে? 

শানাজ কিছুক্ষণ নিরব থেকে নীতিকে থাকার অনুমতি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। নীতি শানাজের জায়গায় বসে ঘুমন্ত মেহনূরের কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। প্রীতি এসে বিছানায় বসলে মেহনূরের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে বলে, 

  - আপু, মেহু না অনেক সুন্দর। মেয়েটাকে দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে। আমি একটা মেয়ে হয়ে যদি ওর রূপের প্রশংসা করি, তাহলে একবার চিন্তা করো ভাইয়ার কি অবস্থা হচ্ছে? আমার মন বলছে ভাইয়া ওর সিচুয়েশন শুনে ডেসপারেট ফিল করছে। কিন্তু সেটা আমাদের সামনে প্রকাশ করছেনা। 

মেহনূরের মাথায় আলতো হাতে বুলিয়ে দিতেই বুকভর্তি নিশ্বাস ছাড়লো নীতি। মাহতিম যে নিজেই অস্থির হয়ে বসে আছে সেটা নীতি স্বচক্ষে দেখেছে। নীতি যে বাধ্য হয়ে ভাইয়ের ধমক খেয়ে মেহনূরকে দেখার জন্য এসেছে, সেটা আর খুলে বলেনি কাউকে। একপর্যায়ে ঘুমে হাই তুলতে লাগলো প্রীতি। আড়াই বছরের ছোট বোনকে রুমে যেয়ে ঘুমাতে বললো নীতি। নীতির কথায় আজ্ঞা মেনে প্রীতি ঘুমাতে চলে গেলে সে রুমের আরেকটি বিছানায় যেয়ে বসে। মেহনূরের রুমে দুইটা কাঠের বিছানা, একটা জানালার কাছে, আরেকটা রুমের মাঝখানে।  মেহনূর কাথামুড়ি দিয়ে জানালার কাছে শুয়ে আছে। নীতি ভেজানো জানালাটা খুলে দিয়ে সোলারের লাইট বন্ধ করে দিলো। দ্বিতীয় বিছানায় চুপচাপ ঘুমহীন চোখে শুয়ে পরলো। আজ কোনোভাবেই ঘুমানো যাবেনা, ঘুমালে মাহতিম ওকে আস্তো রাখবেনা। নীতির ইচ্ছে করছে চোখের মধ্যে মরিচ ডলে দিতে, কিন্তু সাহসে একদম কুলাচ্ছে না। 

চারপাশ যতো নিরব হচ্ছিলো প্রকৃতির ভূতুড়ে আওয়াজ ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। দূরে কোথাও 'ঘেউ ঘেউ' করে কুকুর ডাকছে, ঝিঁঝিপোকার শব্দতরঙ্গ অদ্ভুতভাবে শোনা যাচ্ছে, মৃদ্যু বাতাসের দমকায় গাছের ডালপালা পৈশাচিক ভঙ্গিতে ভয় দেখাচ্ছে। মাটিতে লুকিয়ে থাকা শত শত নাম না-জানা পোকাগুলো বিশ্রী-বিকট শব্দ করছে। বাইরে এখন ভরা জোৎস্নার রাত, দ্বিগ্বিদিক রূপার আলোয় প্রকৃতি যেনো ঝলমল করছে। বুকের ভেতর তোলপাড় করা যন্ত্রটা মারাত্মক যন্ত্রণা দিচ্ছে। কোনোভাবেই শুয়ে-বসে-দাড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছেনা মাহতিমের জন্য। একপলকের দৃষ্টির জন্য অসহ্য লাগছে সবকিছু। ডাক্তারের কথাগুলো শোনার পর ইচ্ছে হচ্ছিলো জিপ স্টার্ট দিয়ে শহরের মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে আসতে, কিন্তু ' লোকে কি ভাববে ' এটা চিন্তা করে আর আগায়নি সে। মাহতিম রুমের ভেতর পায়চারি বন্ধ করে খোলা জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো। ট্রাউজারের পকেট থেকে মোবাইল বের করে সময়টা একবার দেখলো। রাত দুইটা আটত্রিশ বাজে এখন। জানালার বাঁ দিকে বাঁহাত হেলান দিয়ে ডানহাতে ফোনটা পকেটে পুড়লো। ডার্ক ব্রাউন রঙের টিশার্টটা ক্রমেই গরমের জন্য অসহন ঠেকতে লাগলো। নিজেকে শান্ত করতেই নিশ্বাস ছাড়ার জন্য ঠোঁট চোখা করে চোখ বন্ধ করলো। আয়নার পানে তাকিয়ে থাকা ভয়ার্ত দুই চোখ, কাঁপুনিতে থরথর করে উঠা রক্তিম-লাল ঠোঁট, কুচি গুঁজার জন্য পেটের কাছ থেকে শাড়ি উঠানো, আঙ্গুলের কবল থেকে একে-একে কুচি ছেড়ে দেওয়ার মূহুর্ত, সবই মনের দৃশ্যপটে স্পষ্টরূপে দেখতে পাচ্ছিলো। যদি আর কয়েক সেকেন্ড ওখানে দাড়িয়ে থাকতো, তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বড্ড কষ্টসাধ্য হতো। ওই দৃশ্য দেখলে মাথা অটোমেটিক কাজ করা বন্ধ করে দিতো। মাহতিম জানালা থেকে হাত সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। ওমনেই নিজেকে শক্ত করে দরজার ছিটকিনি খুলে ফেললো। খুবই সাবধানে রুমের বাইরে পা ফেলে আশেপাশে তীক্ষ্মদৃষ্টি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে লাগলো। একধাপে তিন সিড়ি করে উঠতেই চুপচাপ মেহনূরের রুমের কাছে আসলো। আবারও ডানে ও বামে সর্তক দৃষ্টিতে তাকালো। বিপদমুক্ত অবস্থা বুঝতেই চট করে ভেতরে ঢুকে রুমের দরজা আটকে দিলো। কিন্তু লাইটহীন রুমে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। মাহতিম আন্দাজের উপর ভিত্তি করে হাত এগিয়ে লাইট জ্বালালো। ওমনেই যে দৃশ্য দেখলো, তাতে প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে ঠোঁট কুঁচকে দ্বিতীয় বিছানায় কাছে আসলো। নীতি পাহারা দেওয়া বাদ দিয়ে আরামসে ঘুমাচ্ছে, এই দৃশ্য দেখে ঠাস-ঠাস করে গাল বাজিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে। রাগের মাথায় শূন্যে হাতও উঠালো মাহতিম, কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে ডাকলো, 

  - নীতির বাচ্চা উঠ্! 

নীতি ঘুমের রেশে ডানপাশ থেকে বাঁপাশ ফিরে শুলো। মাহতিম ওর অবস্থা দেখে আরো দুধাপ চটে উঠলো। ক্রোধের বশে ঠিকই ঘুমন্ত নীতির গালে ঠাস ঠাস করে চড় মারলো মাহতিম। অনেকটা ভয় ও বিষ্ময় নিয়ে হুড়মুড় করে উঠলো নীতি। গালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে মাহতিম দাড়িয়ে আছে। ভয়ে-ভয়ে দুটো ঢোক গিলে গাল থেকে হাত নামিয়ে তোতলানো সুরে বলে, 

  - ভা-ভা-ই-য়া, এই মা-মাত্রই শু-য়েছি। 

মাহতিম ক্রুদ্ধসুরে বলে উঠে, 

  - তা তো দেখতেই পাচ্ছি। তোকে আমি ঘুমানোর জন্য পাঠিয়েছি? কি বলেছিশাম মনে নেই? 
নীতি আর উত্তরের জন্য মুখ খুললো না। চোখ নিচু করে বিষণ্ন মুখে বসে থাকলে মাহতিম গলা নামিয়ে স্বর নিচু করে ওকে বাইরে যেতে বলে। নীতি প্রথমে আশ্চর্য হয়ে যায় এ কথা শুনে, পরক্ষনে মাহতিমের রাগান্বিত অবস্থা ভেবে কিছু বলেনা সে। রুমের বাইরে গিয়ে দরজা চাপিয়ে পাহাড়া দিতে থাকে। মাহতিম বুঝতে পারলো এই প্রথম সে ইচ্ছাপূর্বক মেহনূরের রুমে এসেছে। যেখানে মেহনূর অচেতন হয়ে পরে আছে। পিছু ফিরে তাকালেই সে মেহনূরকে দেখতে পাবে। কিন্তু কেমন এক জড়তা যেনো মনের অলিন্দে ছুটাছুটি করছে। মন যেনো বলছে, একবার তাকালে নিস্তার নেই মাহতিম, মস্তিষ্ক যেনো বলছে, এখানে না এসে যাবে কই? মাহতিম দুই চেতনার টানাপোড়নে কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে রইলো। মুখ উঁচু করে সোলার লাইটটা দেখে কি যেনো চিন্তা করলো, সেই মূহুর্ত্তেই সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে লাইটটা নিভিয়ে দিলো। দরজার বাইরে পাহাড়া দিতে গিয়ে সুইচের শব্দে চমকে উঠলো নীতি। সাথেসাথে আশ্চর্য দৃষ্টিতে পেছনে ফিরে তাকালো। দরজার নিচ দিয়ে আলো আসছেনা কেনো? এতোক্ষন যে আলোটা ছিলো সেটা কোথায় গেলো?মাহতিম কি সত্যিই লাইট নিভিয়ে দিলো? কেনো নিভালো? নীতি অন্তত এটুকু জানে মাহতিম খারাপ চরিত্রের ব্যক্তি না। কিন্তু আজকের সমীকরণ সে কিছুতেই মিলাতেনা পারছেনা। একচুলও না। 

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই
#পর্বসংখ্যা_০৫

  -  চলবে 

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget